Bangla Choti আমি কোল বালিশটাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।মিহিন নিশ্চই আমার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে।থাকুক! আমার কি? আমি কি ভয় পাই নাই? ওর কি একার রাগ আছে নাকি? আমার নেই?
মিহিন! যার সাথে আমার আজকে বিয়ে হয়েছে।আর আজ আমাদের বাসার রাত।বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।বিয়ের পূর্বে যে কয়দিন সময় ছিল সে কয়দিনে মেয়েটাকে অনেকটাই পটিয়ে পেলেছি।আমার অবশ্য মেয়ে পটানোর অভিজ্ঞা বেশ ভালোই আছে।আগেই দু’টাকে পটিয়েছিলাম।সেই সুবাদে কিছুটা অবিজ্ঞতা আছে আমার।
আমি ভাবতে পারি নি বাসর ঘরে আমার জন্যে এমন কিছু অপেক্ষা করছে।
ও যখন আমাকে সালাম করে বিছানায় বসল ততক্ষণ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল।কিছু বিষয় নিয়ে ওর সাথে কথা বলছিলাম।হঠাৎ করেই ও বলে উঠল,
:তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
আমি ওর গম্ভিরতা দেখে অভয় দিয়ে বললাম,
:হুম।বল।সমস্য নেই।
আমি ভেবেছি সাধারণ কোন বেপার নিয়ে কথা বলবে ও।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা হুট করেই বলে ফেলল,
:তুমি কি আগে কখনও প্রেম করেছ?
আমি চট করেই ওর দিকে করে তাকালাম।চেহারায় গম্ভির ভাব এখনও কাটে নি।তাই মৃদু হেসে ওকে বললাম,
:কি যে বল না।আমি আর প্রেম! কোথায় কি।আমি এসবে কখনও জড়াই নি।এসব একদম ভালো লাগে না আমার কাছে।
ও চেহারার গম্ভির ভাব কাটিয়ে কপট রাগ নিয়ে আমার দিকে তাকাল।বলল,
:সত্যিই তো?
:আরে হ্যাঁ।সত্যি।আমি মিথ্যা বলি না কখনও।
:আরেক বার ভেবে দেখ।
আমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি যে মিহিন আমার মিথ্যাটা ধরে ফেলেছে।কিন্তু ও তো আমার মিথ্যা ধরতে পারার কথা না।তাহলে?
আমি ছোট খাট মিথ্যা বেশ ভালোই বলতে পারি।কেউ কখনও ধরতে পারে নি।এই শেষ মেশ যদি নতুন বউয়ের কাছে ধরা খাই তাহলে আর উপায় নেই। মান সন্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।না! তা হতে দেওয়া যাবে না।আমি গলা খাকিনী দিয়ে বললাম,
:আরে ভাবার কি আছে। আমি কি মিথ্যা বলছি নাকি? যা সত্যি তাই বললাম।
:ও।তাই না! সত্যি বলছ আমার কাছে?
:হুম।তুমিই তো আমার জান পাখি।তোমার কাছেই তো সত্য বলব নাকি।
ও আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,
:এই একদম নেকামি করবা না।কি ভেবেছ কি? আমি কিছুই জানি না।আমি সব জানি!
:ক-ক-কি জান তুমি?
:রুপা এবং নিতুর সম্পর্কে সব কিছু জানি আমি ।
আমি অনেকটাই চুপসে গেলাম।অবশেষে বউয়ের কাছে ধরা খেতে হল? আমি মাথা নিচু করে বললাম,
:দুর্ভাগ্যের বেপার হল এরা দুজনের একজনই আমার হয় নি। দুজনেই আপন স্বামি নিয়ে বেশ আয়েশেই আছে।
ও কিছুটা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
:চুপ কর! এই মুখ নিয়ে কথা বলছ কিভাবে।যাও।বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়।
:কেন? ফ্লোরে শুব কেন?
:ওটা তোমার শাস্তি।
শালার ওই দুই মাইয়ার জন্যে আজ আমার এই অবস্থা। হাতের কাছে পেলে কয়েকটা দিতাম।ও বালিশটাকে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
:যাচ্ছ না কেন? জলদি যাও।আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাব।
আমি কিছু একটা ভেবে বালিশটাকে রেখে উঠে দাঁড়ালাম।আলমারি খুলে আমার বউয়ের শত্রুকে খুঁজতে লাগলাম এবং কাঙখিত জিনিসটা পেয়েও গেলাম। কোল বালিশ টা নিয়ে এগিয়ে গেলাম খাটের দিকে। ও আমার হাতে কোলবালিশ দেখে কিছুটা অবাক হল।তবে কিছু বলল না।আমি কোন কথা না বলে চট করেই শুয়ে গেলাম খাটে। বললাম,
:খাটটা তোমার না।আমার।আমার বাবা কিনে দিয়েছে। যদিও এখন বলবে আমারও সমান অধিকার আছে।তাই আগেই তোমাকে অর্ধেক দিয়ে দিলাম। যাও! খাটের বাকি অংশ তোমার।
এই বলে শুয়ে গেলাম। ও কিছু না বলে আমার সাহস দেখে অবাক হল।ও নিজেও কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইল।
আমি কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে চোখ খুলে ওর দিকে তাকালাম।ওর মুখটা কেমন জানি আষাঢ়ে আকাশের মত হয়ে গেল।রাগ আর কান্না মিশ্রিত মুখটা দেখে আমার কেন জানি মায়া হল। আমি বললাম,
:কি ব্যাপার বসে আছ যে?
ও কিছু বলল না।অন্য দিকে মুখ ফিরাল।আমার আবারো খুব মায়া হল ওর প্রতি। আমি উঠে বসে ওর দিকে তাকালাম।আস্তে করে ওর হাতটা ধরলাম। ও ঝটকা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।আমি আবার ধরলাম। ও আবার ছাড়িয়ে নিল।আমি ওর চুপ করে থাকা দেখে বললাম,
:কি হয়েছে? এমন করছ কেন?
ও আবার আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলল,
:তো কি করব আমি? নাচবো?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
:দেখ! ওরা আমার অতিত ছিল।ওদেরকে নিয়ে আমার যত স্বপ্ন ছিল সব ভেঙ্গে গিয়েছি।সময়ের সাথে সাথে সব ধুলোয় মিশে উড়ে গেছে হাওয়ায়। হ্যাঁ। আমার কষ্ট হয়েছিল।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি।আমার সব কিছু এখন তোমাকে নিয়ে মিহিন।তোমার চরিত্র প্রবেশ করেছে আমার জিবনের নাটকে।যত দিন সেই নাটক স্থাই হবে ততদিন তোমাকে বেঁধে রেখে দিব।ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করব তোমাকে।এখন আমার কাছে তোমার চরিত্রটাই বেশি প্রয়োজনীয় মিহিন।প্লিজ অতিতের জন্যে আমাকে কষ্ট দিও না।প্লিজ!
কিছুটা অনুনয় করে বললাম।একেবারে নরম স্বরে।যেন মন গলে যায় মেয়েটার।এ কয় দিনে মেয়েটাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি আমি।তাই ওকে হারাতে চাই না।
ও কি জানি ভাবল।রাগের আভা অনেকটাই মুছে গিয়েছিল ওর মুখ থেকে।আমি কিছুটা খুশি হয়ে ওর হাতটা ধরলাম। ও কিছুক্ষন কিছু বলল না।আমি আরেকটু বেশি খুশি হলাম।ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ঝটকা
নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল।মুখে আবার পূর্বের ন্যায় রাগের আভা চলে এসেছে।বলল,
:কি ভেবেছ? নরম কথা বলে আমার মন নরম করবা? এত সহজ নয় বুঝলা।তোমাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
আমি আরো নরম হয়ে বললাম,
:আচ্ছা আমার দোষটা কি বল? প্রেম করেছি। এটাই কি দোষ?
:ওমা।প্রেম তো আমিও করেছি।আমি যদি প্রেম না করতাম তাহলে তোমার প্রেম করাটাও দোষের আওতাভুক্ত হত। তোমার দোষ হল তুমি মিথ্যা বলেছ আমাকে।এটাই তোমার দোষ।
:অ্যাই! তুই প্রেম করেছ?
:হুম।তুই করতে পার, আমি পারি না?
:তুমি আমাকে আগে বল নি কেন?
:কেন? আগে বললে কি বিয়ে করতে না? আর তাছাড়া তুমিও তো আমাকে আগে বল নি?
আমি কিছু বললাম না।কিছু সময় চুপ করে থাকলাম।মিহিনও কিছু বলছে না।চুপ করে আছে।আমি আড় চোখে তাকে একটু দেখলাম।বললাম,
:তাহলে হিসেব অনুযায়ী তুমিও আমাকে মিথ্যা বলেছ। আর তাই তোমাকেও শাস্তি পেতে হবে
:ওমা! আমি আবার কখন মিথ্যা বললাম। তুমি কি আমাকে কখনও জিজ্ঞেস করেছ নাকি?
আমি আটকে গেলাম।আসলেই আমি বোকা। বড্ড বোকা আমি।আমি কিছু বললাম না।চুপ করে রইলাম।মিহিনের দিকে তাকিয়ে দেখি মিহিনও চুপ করে আছে।আমি আবার বললাম,
:আচ্ছা তোমারা কি প্রতিদিন দেখা করতে? দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে?
ও হয়ত বুঝতে পেরেছে আমি কি বলতে চাইছি।ও বলল,
:আরে নাহ! ওর সাথে আমার ফেবুতে পরিচয় হয়।কখনও সামনাসামনি দেখা হয় নি।শুধু কয়েকটা ছবি দিয়েছে ও আমাকে।আর খুব ভালো গল্প ও কবিতা লিখত ও।আমি রিতিমত ওর একজন ভালো পাঠিকা ছিলাম।এর থেকেই প্রেম হয়।কিন্তু হঠাৎই একদিন সব কালো হয়ে গেল।আমাকে না জানিয়ে আমার নীল জগৎ টাকে কালো করে কোথায় হারিয়ে গেল শয়তানটা।অনেক খুঁজেছি।ফোনও দিয়েছি।কিন্তু সব জায়গায় আমাকে ব্লক করে ও।কালো করে দেয় আমার দুনিয়াকে।তুমি যেমনটা ভাবছ।তেমন কিছুই হয় নি।