চোখ খুলে কিছুক্ষন পড়ে থাকলাম একই ভাবে। কিছুই মনে পড়ছে না। শরীর খুব ক্লান্ত। মাথা টা ভারী হয়ে আছে। চোখের সামনে সচ্ছ বালির তট। পায়ের নিচে জলের ঢেউ বার বার এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ঘোরের মধ্যেও সমুদ্রের গর্জন বুঝে নিতে অসুবিধা হলো না। কোনো রকমে অবসন্ন শরীরে উঠে বসলাম। পরনের জামা টা শুকিয়ে গেলেও প্যান্ট এর নিচের দিক টা ভিজে। কোথায় আছি আমি? কতক্ষন এভাবে আছি এখানে? কিছুক্ষন বালির ওপর দু হাত পা ছড়িয়ে বসে রইলাম। সামনে বিশাল নীল জলরাশি। তার ঢেউ এসে পড়ছে পায়ের কাছে। মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক একবার দেখলাম। দুদিকে সচ্ছ বালির সৈকত চলে গেছে যতদূর চোখ যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম। একটু দূরে জঙ্গল শুরু হয়েছে। দূরে ছোট ছোট পাহাড়ের মাথা গুলোও চোখে পড়লো। মাথার ওপরে সূর্য। খুব গরম না লাগলেও, রোদ টা সহ্য করতে পারছি না। ধীরে ধীরে উঠে এগিয়ে গেলাম যেখান থেকে জঙ্গল টা শুরু হয়েছে সেই দিকে। এসে একটা লম্বা গাছের নিচে বসলাম। প্যান্ট এর পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইল টা বের করে আনলাম। নাহ। এটার আর কোন কাজ নেই। নোনা জল ঢুকে পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। আবার মনে করার চেষ্টা করলাম। একটু একটু ছেঁড়া ছেঁড়া মনে পড়তে শুরু করলো।
ব্রাজিল থেকে আমরা সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছিলাম। কত তারিখ ছিল যেনো। মনে পড়ছে না। তারপর হঠাৎ মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণি ঝড়ের মধ্যে পড়লাম। উফফ সেকি ভয়ানক ঝড়। জাহাজ টা ডুবে গেলো। তারপর তারপর…
হঠাৎ একটু দূরে খস খস শব্দ শুনে সচকিত হলাম। দেখলাম একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে একজন কম বয়েসী মেয়ে। মাথায় একটা ঝুড়ির মত। আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমিও চুপ করে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে। একটু পর মেয়েটাই আমার দিকে এগিয়ে এলো। মাথা থেকে ছোট ঝুড়িটা নামিয়ে পাশে রাখলো। তারপর আমার উদ্দেশ্যে কিছু বলল। কিন্তু আমি তার কোনো মানে উদ্ধার করতে পারলাম না। এটা কি ভাষা? বোকার মত তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটার দিকে। মেয়ে টা আবার কিছু প্রশ্ন করলো। আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগলো। একে শরীর ভালো নেই। তার ওপর ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় প্রাণ যাবার জোগাড়। চোখ দিয়ে জল চলে এল। দুহাতে মুখ ঢেকে বসে রইলাম। হঠাৎ মেয়ে টা শুদ্ধ বাংলায় জিজ্ঞাসা করলো। “তুমিও কি জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার?”
আমি চমকে উঠলাম। মুখ তুলে মেয়েটার দিকে অবাক চোখে তাকালাম। “আচ্ছা তার মানে তুমিও বাঙালি”- মেয়েটা আবার বললো। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। মাথা টা কেমন যেনো ঘুরছে। মেয়ে টা একটু এগিয়ে এসে ঝুড়ি থেকে দুটো পেয়ারার মত ফল বার করে আমার হাতে দিলো। বললো- “খেয়ে নিন। আপনি ক্ষুধার্থ। তারপর কথা বলবো।” আমি ফল দুটো পেয়ে সব কথা ভুলে গেলাম। গোগ্রাসে ফল দুটো খেয়ে শুরু করলাম। মেয়ে টা পাশে বসে মিটি মিটি হাসতে লাগলো। দুটো ফল শেষ হতেই মেয়ে টা একটা মাটির ছোট হাঁড়ি আমার দিকে এগিয়ে দিলো। দেখলাম তাতে দুধ আছে। ঢক ঢক করে খেয়ে নিলাম পুরো দুধ টা। তারপর চুপ করে বসে রইলাম খানিক। এবার একটু ভালো লাগছে। শরীরে একটু বল পাচ্ছি। একটু ধাতস্থ হয়ে আমি প্রশ্ন করলাম-“এটা কোন জায়গা?” মেয়ে টা বললো- “এটা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে একটা দ্বীপ। তোমাদের জাহাজ ডুবি হবার পর কোনো ভাবে তুমি ভাসতে ভাসতে এই দ্বীপের সৈকতে এসে উঠেছ।”
এবার আমার মাথায় একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো। আমি প্রশ্ন করলাম – “তুমি কিভাবে জানলে যে আমাদের জাহাজ ডুবি হয়েছিল?” মেয়ে টা বলল-“গত কাল এই গণ্ড দ্বীপের অপর প্রান্তে আরো দুজন কে আমরা উদ্ধার করেছি। দুজনেই মহিলা। ওদের থেকেই শুনেছি সব।”
হঠাৎ আমার একটা কথা মনে পড়ে গেলো। আমার স্ত্রী সাথী। সেও তো আমার সাথেই ছিল যখন আমরা লাইফ জ্যাকেট পরে সমুদের পড়লাম। কত মানুষ সব একসাথে ওই দুর্যোগের মধ্যেই জলে ভাসছিলাম। সব লাইফ বোট জলে ডুবে গেছিলো। আমি সাথী কে কোনো রকমে একটা ছোট দড়ির সাহায্যে আমার সাথে বেঁধে রেখেছিলাম। তারপর কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম ঠিক নেই। চোখ খুলে আজ এই দ্বীপে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। কিন্তু সাথী কোথায়? বুকের ভেতর টা হুহু করে উঠলো একবার। ওরা যে দুজন কে উদ্ধার করেছে তাদের মধ্যে একজন সাথী নয় তো? হতেই পারে। আমাকে দেখতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের কাছে পৌঁছতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে গেলাম। কিন্তু পরক্ষনেই মাথা ঘুরিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম। মেয়ে ব্যস্ত হয়ে আমাকে বললো -“তোমার শরীর এখন খুব দূর্বল। আমার সাথে আমার গ্রামে চলো। ভালো করে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিলেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে।” আমি ব্যাকুল হয়ে ওকে বললাম – “আমাকে ওই দুজনের কাছে নিয়ে যাবে? ওদের মধ্যে একজন হয়তো আমার স্ত্রী”।
“নিশ্চই নিয়ে যাবো। তবে ওই প্রান্তে যাবার জন্যে একটা গভীর খাত আর নিচে খুব খরস্রোতা একটা নদী আছে। সেটা পেরিয়ে যেতে হয়। নদীর ওপর একটা সেতু আছে। গতকাল পাহাড় থেকে একটা পাথর গড়িয়ে পড়ে সেতুর একটা দিক ভেঙে দিয়েছে। এখন ওর ওপর দিয়ে পারাপার করা বিপজ্জনক। গ্রামের লোক সেতু টা সারাই এর কাজে লেগেছে। তবে সেটা ঠিক করতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগবে। ততদিন আমাদের গ্রামে অতিথি হয়ে থাকো। তারপর আমি নিজে তোমাকে ওদের কাছে নিয়ে যাবো।” এই বলে মেয়ে টা উঠে দাড়ালো। আমি আর কি করবো। এছাড়া তো কোনো উপায় নেই। কত বড় দ্বীপ জানি না। কোথায় নিজে থেকে খুঁজব। আমি জিজ্ঞাসা করলাম – “তোমার নাম কি?” মেয়ে টা বললো -“টিরো”
টিরো মাথায় আবার সেই ফলের ঝুড়িটা তুলে নিলো। তারপর ইশারায় আমাকে অনুসরণ করতে বললো। টিরো আগে আগে চলতে লাগলো আর আমি ওর পিছনে। দুদিকে লম্বা লম্বা অচেনা গাছের সরি। মাঝে ঘাস দিয়ে ঘেরা সরু রাস্তা। এতক্ষন মাথার ঠিক ছিল না। এখন অনেকটা সুস্থ লাগছে। তাতেই খেয়াল করলাম টিরোর শরীরে পোশাক খুবই সামান্য। বুক চট জাতীয় এক ধরনের কাপড় দিয়ে বাঁধা। কাপড় টা পিঠের ওপর গিঁট দেওয়া। কাপড়টা শুধু স্তন জোড়া কেই ঢেকে রেখেছে। নিচেও একই কাপড় কোমরের ডান দিকে গিঁট দেওয়া। কাপড়টা থাই এর মাখামাঝি শেষ হয়ে গেছে। টিরোর বয়স আনুমানিক ২৩ হবে। গায়ের রং একটু তামাটে। তবে কলো একদমই নয়। শরীরে একটা জেল্লা আছে। শরীর আর মুখের গঠন অনেক টা যেন ল্যাটিন আর আফ্রিকান দের মিশ্রণ। তবে সব থেকে যেটা উল্লেখযোগ্য, সেটা হলো টিরো র শারিরীক গঠন। শরীরে কোথাও একফোঁটা মেদ নেই। একদম সুঠাম শরীর। বক্ষদেশ মাঝারি হলেও পশ্চাতদেশ বেশ উন্নত এবং সুগঠিত। অসামান্য গঠন দুই নিতম্বের। শিরদাঁড়ার গভীর খাঁজ কোমর থেকে উঠে পিঠের ওপর ছড়ানো ঘন কালো চুলের মাঝে হারিয়ে গেছে।
টিরো র হাঁটার ফলে ওর দুটি নিতম্ব বেশ সুন্দর তালে দুলছিল। নিতম্বের গঠন যে আফ্রিকান জিন থেকেই পেয়েছে সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তবে এসব উপভোগ করার মতো মানসিক অবস্থা আমার ছিল না। আমার শুধু সাথীর জন্যে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আদেও কি ও আর বেঁচে আছে। আমি টিরো কে প্রশ্ন করলাম – “তুমি বাংলা শিখলে কোথায়?” টিরো পিছনে না তাকিয়েই উত্তর দিলো – “আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলবর্তী একটা দেশ সিয়েরা লিওন। আমি ওখানে কিছু বছর থেকেছি ছোটবেলায়। বাংলা সিয়েরা লিওন এর সাম্মানিক সরকারি ভাষা। খুব বেশি লোক বলেনা। তবে আমি শিখে নিয়েছিলাম। এছাড়াও আমি স্প্যানিশ, আর একটু ইংলিশ ও বলতে পারি। আমার ভাষা শিখতে খুব ভালো লাগে” একটু থেমে টিরো আমাকে প্রশ্ন করল – “তোমার নাম কি? কোথায় থাকো?” আমি একটু মনের মধ্যে গুছিয়ে নিয়ে বললাম -“আমি সুমিত সেন। থাকি ইন্ডিয়াতে। ওখানে আমার খুব বড়ো ব্যবসা আছে। স্ত্রীর সাথে ভ্রমণে এসেছিলাম ব্রাজিলে। আমাদের দুবছর বিয়ে হয়েছে। তবে কাজের চেপে কোথাও যেতে পারিনি। এই বার অনেক কষ্টে সময় বার করে ব্রাজিল এসেছিলাম। বাজিলে এক মাস কাটিয়ে ফিরে যাবার প্ল্যান ছিল। কিন্তু ওখানে একটা কনটেস্টে আমরা একটা লটারি জিতি। ব্রাজিল থেকে জাহাজে আমেরিকা ঘুরে ব্রাজিলে রিটার্ন। খরচ সম্পূর্ণ ওদের। এরকম সুবর্ণ সুযোগ আর কোথায় পেতাম। আমাদের দেশে ফেরার সময় এর মধ্যেই আমরা ফিরে যাবো ব্রাজিল। তাই কোনো সমস্যা রইলো না। সেই মত আমরা যারা লটারি জিতেছিলাম তারা ছোট একটা লাক্সারি জাহাজে যাত্রা শুরু করলাম। তারপর তো মাঝপথে ওরকম দুর্যোগ। কিভাবে যে বেঁচে গেলাম সেটাই এখন আশ্চর্য লাগছে”
কথা বলতে বলতে এক জায়গায় এসে কিছু ছোট ছোট কুড়ে ঘর চোখে পড়লো। টিরো বললো – “এই আমাদের গ্রাম।” দেখলাম গাছের নিচে নিচে ঘাস, তাল জাতীয় গাছের পাতা, আর কাঠ দিয়ে বানানো ছোট ছোট কুরে ঘর। কিছু ঘর গাছের অপরেও বানানো। এখানে জঙ্গল অতটা ঘন নয়। একটু ফাঁকা ফাঁকা। একটা তুলনামূলক বড়ো কুটিরের সামনে এসে টিরো দাঁড়ালো। চারপাশে বেশ কিছু গ্রামবাসি কৌতূহলী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এদের মধ্যে বাচ্চা, মাঝবয়েসী, বৃদ্ধ, নারী পুরুষ সবাই আছে। বড়ো কুটির থেকে একজন মানুষ বেরিয়ে এলো। টিরো তার সাথে ওদের ভাষায় কিসব কথা বলতে লাগলো। আর মাঝে মাঝে আমার দিকেও ইশারা করতে লাগলো। একটু পর কথা শেষ হলে আমাকে টিরো বললো – “এ হলো আমাদের গ্রামের প্রধান। এর বাড়িতেই তুমি থাকবে। কোনো চিন্তা করো না। আমরা খুব অতিথিপরায়ণ। আমরা অতিথিকে ভগবান মনে করি। তুমি খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নাও। আমি একটু কাজে যাবো। সন্ধ্যা বেলায় ফিরে আসবো।”
এরপর টিরো ওই প্রধানের সাথে আরো কিছু কথা বলে আমাকে বিদায় জানালো। প্রধান হাসি হাসি মুখ করে দুই কান দুহাত দিয়ে চাপা দিয়ে মাথা নিচু করলো। বুঝলাম এটাই এদের অভিবাদন জানানোর পদ্ধতি। প্রধান নিজের বুকে হাত দিয়ে বললো – “লাকু… লাকু…” বুঝলাম ওর নাম লাকু। লাকু আমাকে আপ্যায়ন করে নিজের কুটিরের ভেতরে নিয়ে গেলো। একটা পাতার বিছানার ওপর চটের মত কিছু ঢাকা। তাতেই আমাকে বসতে দিল। ভেতরে দুটো কুটুরী। লাকু আমাকে কিছু বলে একটা কুটুরীর মধ্যে ঢুকে গেলো। একটু পর ফিরে এলো। সাথে একজন মহিলা। মহিলার হতে একটা পাত্র। তাতে অনেক রকমের ফল। মহিলা মনে হয় লাকুর বউ। মহিলা আমার সামনে এসে একই ভাবে অভিবাদন জানালো। তারপর আমার সামনে খাবারের পত্র টা নামিয়ে রাখলো। এতক্ষনে একটা জিনিস আমি খেয়াল করলাম। এই মহিলা এবং বাইরে যতজন মহিলা দেখেছিলাম সবার পরনে টিরোর মতোই পোশাক। পুরুষদেরও প্রায় একই পোশাক, তবে পুরুষদের ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত। আর সবার শরীর একই রকম সুগঠিত। করো শরীরে একটুকুও মেদ নেই। ছাঁচে ফেলে বানানো যেনো সবার শরীর। সব মহিলাদের পশ্চাতদেশ উন্নত আর সুগঠিত। এই মহিলার বুক একটু ভারী। নিম্নদেশে কাপড়ের নিচে থেকে পায়ের সৌন্দর্য আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। কিন্তু আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
এতটা হেঁটে দুটো ফল কখন হজম হয়ে গিয়েছিল। খাবার দেখে আমার খিদেটা আমার চাগিয়ে উঠলো। আমি অনেকটা ফল, দুধ, মধু আর নারকেলের জল গোগ্রাসে খেয়ে ফেললাম। আমার খাওয়া হয়ে গেলে মহিলা আমার সাথে জল ঢেলে দিলো। লাকু আমাকে বিছানার দিকে দেখিয়ে কিছু বললো। আমি বুঝলাম আমাকে বিশ্রাম নিতে বলছে। আমার সত্যি খুব ক্লান্ত লাগছিল। আমি শুয়ে পড়লাম পাতার বিছানায়। আর একটু পরেই তলিয়ে গেলাম ঘুমের অতল সমুদ্রে।
যখন ঘুম ভাঙলো দেখলাম আমার সামনে টিরো আর লাকু পাশেই বসে কিছু কথা বলছে। আমি ঘুমিয়ে বেশ চাঙ্গা অনুভব করছিলাম। উঠে বসলাম। দেখলাম সন্ধার অন্ধকার নেমেছে। সামনে মাটির ওপর একটা ছোট প্রদীপ জ্বলছে। তাতেই ছোট কুটির টা আলোকিত হয়ে উঠেছে। টিরো আমাকে দেখে বললো -“এখন কেমন লাগছে?” আমি বললাম -” বেশ সুস্থ লাগছে।” টিরো বললো -“সমুদ্রের জলে ভিজে তোমার শরীরে নুন ফুটেছে। জামা কাপড়ের অবস্থাও একই। এখানে কাছেই একটা মিষ্টি জলের হ্রদ আছে। স্নান করে পরিষ্কার হয়ে নাও। আরো ভালো লাগবে।”
টিরো র সাথে যখন হ্রদ এর সামনে এলাম তখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। চারপাশে বড়ো বড়ো গাছের মাঝে ছোট একটা হ্রদ। এখানের আবহাওয়া বেশ মনোরম। না গরম না ঠান্ডা। একদম নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। টিরো একটা মশাল নিয়ে এসেছে। মসালের আলোতে টিরো র ত্বক চকচক করছিলো। ওর শরীরের গঠন আর নিতম্বের দুলুনি আমার চোখ টানছিল বারবার। কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছে সব সময়। তাই এসব উপভোগ করতে পারছিলাম না। হ্রদের সামনে এসে মশাল টা মাটিতে পুঁতে দিয়ে টিরো বললো – “তুমি জামা কাপড় গুলো ধুয়ে ফেলো। আমি কাপড় এনেছি। স্নান করে ওগুলোই পরে নিও।” আমি দেখলাম টিরো র হতে ওদের পোশাকের মত একটা কাপড়। মনে হয় এগুলো ওরা এখানকার কোনো গাছের তন্তু থেকে নিজেরাই তৈরি করে।
আমি একটু সংকোচ বোধ করলাম। এই ছোট এক টুকরো কাপড় কোমরের জড়িয়ে ঘুরতে হবে আমাকে? তাও আবার কোনো অন্তর্বাস ছাড়াই। টিরো যেনো আমার মুখের অভিব্যক্তি পড়তে পারলো। বললো – “আমি বুঝতে পারছি তোমার দ্বিধা হচ্ছে। এরকম পোশাকে তোমরা অভ্যস্ত না। তবে…” এই বলে টিরো একটু থামলো। তারপর একটু ভেবে বললো – “দেখো, কিছু কথা তোমাকে বলে নিতে চাই এখনি।” আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম ওর দিকে। টিরো বললো – “আমাদের এই জাতি খুবই অতিথি বৎসল, তবে এরা নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে খুবই গোঁড়া প্রকৃতির। এখানে থাকতে গেলে এদের রীতিনীতি মেনে থাকতে হবে। এদের রীতিনীতি না মানলে এরা বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগাবে না। এর আগে দুজন আমেরিকান পর্যটক কোনো ভাবে এখানে এসে পড়েছিল। তারা দুদিন ভালই ছিল। কিন্তু তারপর উল্টোপাল্টা কাজ করতে শুরু করে। এক জন্যে গ্রামবাসীরা ওদের হাত পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল। আমি চাইনা তোমার সাথেও এরকম কিছু হোক। আমি চাই তুমি তোমার স্ত্রী কে খুজে পেয়ে নিজের দেশে ফিরে যাও। এখানে অনেকে কিছুই তোমার অদ্ভুত লাগবে। কিন্তু দয়া করে সব কিছু মেনে চলো এই কটা দিন। তাহলেই কোনো সমস্যা হবে না।”
আমার স্ত্রীর কথা বলতেই একটা কথা বিদ্যুৎ এর মত মাথায় খেলে গেলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম – “আচ্ছা তোমরা যে দুজন কে উদ্ধার করেছ তারা কি ভাষায় কথা বলে?” টিরো বললো -“বাংলায়।”
আমি টিরোর কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। এর কারণ হলো ওই জাহাজে শুধু তিন জনই বাঙালি ছিল। আমরা, আর একজন ২৮/২৯ বছরের মহিলা। কি যেন নাম বলেছিল… ও হ্যাঁ। লাবনী মিত্র। অবিবাহিতা। সে একাই ছিল। একটু আধুনিক মহিলা। একা একাই ভ্রমণে বেরিয়েছিল। তারমানে এরা ওই দুজন ছাড়া আর কেউ হতে পারেনা। আমার বুক থেকে যেনো একটা পাথর নেমে গেলো। আমি বললাম -“টিরো, তার মানে ওদের একজন আমার স্ত্রী।”
“বাঃ। এতো খুব ভালো কথা। চিন্তা করো না। সেতু টা ঠিক হলেই আমি তোমাকে তোমার স্ত্রীর কাছে নিয়ে যাবো। এবার তুমি নিশ্চিন্তে স্নান করো।” বলে টিরো মিষ্টি হাসলো। আমি ওর সামনে জামা প্যান্ট খুলতে সংকোচ করলাম। টিরো বুঝতে পেরে হেসে বললো -“এটা কোনো ব্যাপার না এখানে। তুমি আমার সামনেই সব খুলতে পারো।” আমি আর কি করবো। টিরো সারাদিন আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। তাই ওর মুখের ওপর কিছু বলতে ইচ্ছা হলো না। তাছাড়া এবার তো আমাকে ওই ছোট একটা কাপড় পরেই থাকতে হবে। তাই লজ্জা করে কি লাভ। আমি টিরো র সামনেই আমার জামা প্যান্ট আর জাঙ্গিয়া খুলে ফেললাম। সারা শরীর চুলকাচ্ছিল নোনা জলে। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে আমি হ্রদের জলে নেমে পড়লাম। তারপর বেশ ভালো করে স্নান করে উঠে এলাম। টিরো আমার লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আমি আবার লজ্জা পেয়ে গেলাম। টিরো আমাকে ওদের কাপড় টা দিয়ে বললো -“নাও এবার এটা পরে নাও।” আমি ওদের মত করে কাপড় টা পড়ে নিলাম। টিরো বললো – “আজ তোমার আপ্যায়ন হবে।” আমি একটু অবাক হলাম। বললাম -“আবার কিসের আপ্যায়ন?” টিরো মুচকি হেসে বলল – “চলো দেখতে পাবে। এটাও আমাদের রীতির মধ্যে একটা”
কুটিরে ফিরে টিরো আমার জামা কাপড় গুলো গাছের ওপর শুকোতে দিয়ে দিলো। তারপর কুটিরের ভেতরে নিয়ে গেলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম – “আচ্ছা, তোমার বাড়ি কোনটা?” টিরো বললো -“দেখিয়ে দেব। তোমার চিন্তা নেই।” এই সময় লাকু এসে টিরো র সাথে কি যেনো আলোচনা করলো। কথা হয়ে গেলে টিরো আমাকে বললো -“চলো এবার তোমার আপ্যায়ন হবে। সাধারণত অন্য গ্রাম থেকে যখন কেও আসে তখন আমরা এই রীতি পালন করি। তবে তোমার আগে দুই আমেরিকান এসেছিল। ওরাই প্রথম কোনো বাইরের লোক ছিল যাদের সাথে আমরা এই রীতি পালন করেছিলাম। তারপর এই তুমি।” এই বলে টিরো দুটো কুটুরির মধ্যে একটা তে ঢুকে গেলো। আমাকে ডাকলো ইশারাতে। আমি ওই ছোট ঘরটার সামনে এসে দেখলাম। ঘরের ভেতরে এক কোণে একটা বড়ো প্রদীপ জ্বলছে। মাটির ওপর পাতার বিছানায় বসে আছে দুপুরের সেই মহিলা। সম্পূর্ণ উলংগ। প্রদীপের আলোয় মহিলার সারা শরীর চকচক করছে। আমি থমকে দাড়িয়ে পড়লাম। টিরো আমাকে বললো -“এখানে যখন কোনো অতিথি আসে, তখন সে যে বাড়ির অতিথি হয় সেই বাড়ির মহিলা তাকে যৌনতা দিয়ে আপ্যায়ন করে।” আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম এই কথা শুনে। কি অদ্ভুত রীতি।
আমি বললাম -“কিন্তু টিরো, আমি বিবাহিত। আমি কিভাবে এসব করবো।” টিরো বললো -“জানি এসব খুব অদ্ভুত লাগবে তোমার। কিন্তু এটাই এখানকার রীতি। যৌনতা এখানে আপ্যায়ন করা আর ধন্যবাদ জানানোর একটা পদ্ধতি। এখানে যৌনতা কে মানুষ খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া মনে করে। আমি তখন কি বলেছি মনে আছে তো? এখানকার যা যা নিয়ম এই কদিন দয়া করে মেনে চলো।”
আমি পড়লাম মহা বিপদে। কি করবো বুঝতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরকম অবস্থায় যে পড়ব সপ্নেও কল্পনা করিনি। টিরো এবার লাকু কে কি যেন একটা বলল। লাকু মুচকি হেসে একটা মাটির পাত্র আমার দিকে এগিয়ে দিলো। দেখলাম ওর মধ্যে একটা পানীয় আছে। অদ্ভুত একটা গন্ধ পানীয় টায়। টিরো বললো -“এটা খেয়ে নাও।” আমি জানিনা এটা কি। কিন্তু প্রতিবাদ করার মতো পরিস্থিতিতে আমি নেই। তাই পানীয় টা ঢকঢক করে গিলে নিলাম। টিরো আমাকে বললো – “শোনো। আরো কয়েকটা কথা বলে দিই। এখানে চুম্বন কে খুব পবিত্র মনে করা হয়। ওটা শুধু মাত্র স্বামী আর স্ত্রী একে ওপরের সাথে করতে পারে। তাই ভুল করেও সঙ্গমের সময় শরীরের কোথাও চুমু খাবে না। তবে শরীরের যেকোনো জায়গা স্পর্শ করতে পারবে। আর একবার বীর্যপাত হলেই উঠে পরবে। দ্বিতীয় বার করা চলবে না।” টিরো কথার মাঝেই খেয়াল করলাম আমার লিঙ্গ নিজে থেকেই উত্থিত হচ্ছে। আর শরীরে একটা কেমন অস্থিরতা অনুভব করছি। বুঝলাম এটা ওই পানীয়ের ফলে। আমার লিঙ্গ শক্ত হয়ে যাবার ফলে নিম্নাঙ্গের কাপড় উচু হয়ে উঠলো। টিরো সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল -” তুমি তৈরি। এবার যাও।” ওই পানীয়ের ফলে আমার শরীরে কামনার সঞ্চার হয়েছে। আমার আর সংকোচ হচ্ছে না। আমি ধীরে ধীরে মহিলার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর কোমরের পাশের গিঁট খুলে কাপড়টা পাশে সরিয়ে রাখলাম। মহিলা হাসি হাসি মুখ করে চিৎ হয়ে শুলো। পা দুটো দুদিকে ফাঁক করে আমাকে আহ্বান জানালো। মহিলার হালকা তামাটে গায়ের রং, সুগঠিত শরীর, উন্নত নিতম্ব, ভারী সুডৌল বুক দেখে মনে হলো যেনো কোনো দেবী।
মহিলার শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। নিশ্চই কোনো সুগন্ধি লাগিয়েছে। একে তো ওই পানীয় তারপর সামনে এই অপার্থিব দৃশ্য, তার সাথে এই সুগন্ধ আমাকে পাগল করে দিল। আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে গিয়ে মহিলার পাছার কাছে বসলাম। আমার লিঙ্গ তখন টনটন করছে। প্রদীপের আলোতেও স্পষ্ট দেখতে পেলাম মহিলার যোনীদেশ। কুঞ্চিত লোমে ভরা। দুপায়ের মাঝে ফোলা যোনির মাঝে সুগভীর উপত্যকা। আমার আর সহ্য হলো না। মহিলার যোনির মুখে আমার লিঙ্গ টা লাগিয়ে এক ধাক্কায় পুরোটা ঢুকিয়ে দিলাম ভেতরে। আমার লিঙ্গ খুব বড়ো না হলেও অন্য সাধারণ মানুষের ঈর্ষার কারণ হবার মত অবশ্যই। মহিলা আহহহ করে উঠলো। কি কারণে জানিনা মহিলার যোনিপথ আগে থেকেই পিচ্ছিল ছিল। আমি ওর বুকে শুয়ে দুহাতে ওর সুডৌল বুক খামচে ধরলাম। তারপর পাগলের মত কোমর নাচাতে লাগলাম। আমার লিঙ্গ ওই ঐশ্বরিক যোনিতে পুচ পুচ করে ঢুকে যেতে থাকলো। স্বভাব বশত আমার বার বার মনে হচ্ছিল মহিলার নরম স্তন দুটো মুখে নিয়ে চুষি।
কিন্তু টিরো র সাবধান বাণী ও মনে পড়ে যাচ্ছে বার বার। টিরো আর লাকু পাশেই দাড়িয়ে আমাদের সঙ্গম দেখতে লাগলো। আমি মহিলার ঘাড়ে মাথা রেখে স্তন দুটো চটকাতে চটকাতে ওর রসকুন্ডে তলিয়ে যেতে থাকলাম। মহিলা আমাকে দুহাত আর দু পা দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমাদের দুজনের মুখ থেকেই সুখ শিৎকার বেরিয়ে আসতে লাগলো। বিভোর হয়ে আমি কতক্ষন সঙ্গম করলাম জানি না। হঠাৎ আমার তলপেট ভারী হয়ে এলো। আমি মহিলার স্তন দুটো সজোরে টিপে ধরে লিঙ্গটা ঠেলে ধরলাম ওর যোনির গভীরে। তারপর আহহহ আহহহ শব্দে গলগল করে ঢেলে দিলাম আমার শরীরের শেষ বীর্য বিন্দু টুকু। আমার দম শেষ হয়ে গেছিলো। আমি ওই ভাবেই শুয়ে কিছুক্ষন থাকলাম। মহিলা আমার পিঠে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আমার হঠাৎ টিরোর কথা মনে পড়লো। আমি তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম মহিলার ওপর থেকে। লিঙ্গটা বার করতেই গলগল করে বীর্য ধারা বেরিয়ে এলো যোনি থেকে। পাশে লাকু দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের সম্ভোগ দেখছিল এতক্ষন। ওর দিকে খেয়াল করতেই দেখলাম ওর নিম্নাঙ্গের কাপড় ফুলে উঠেছে। আমি উঠে পড়তেই লকু নিজের কাপড় খুলে নগ্ন হয়ে গেলো। তারপর নিজের বউ এর কাছে গিয়ে বসলো। আমি লাকুর লিঙ্গ দেখে ঘাবড়ে গেলাম। আমার থেকে বেশ প্রায় 3 ইঞ্চি বড়ো হবে। আর সেরকম মোটা। মহিলা তখনও হাঁপাচ্ছিল। লাকু ওই বীর্য ভরা যোনিতেই নিজের লিঙ্গ ভরে দিল তারপর বড়ো বড়ো ঠাপে নিজের লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিতে থাকলো মহিলার গভীরে। মহিলার মুখ থেকে এবার গোঙানি বেরিয়ে এলো। লাকু নিজের ঠোট গভীর আবেগে ওর বউ এর ঠোঁটে ভরে দিল। আমি বিভোর হয়ে দেখছিলাম দুটো সুঠাম শরীরের আসুরিক মিলন। টিরো হঠাৎ আমার হাত ধরে বললো -“চলো আমরা বাইরে যাই।” আমার যাবার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু টিরো আমাকে টেনে নিয়ে বাইরে চলে এলো। কুটিরের বাইরে মশাল টা একটা গেছে বাঁধা ছিল। তাতেই চারপাশটা আলোকিত হয়ে আছে। আমি বাইরে এসে হাপাতে লাগলাম। টিরো আমাকে বললো -“স্বামী স্ত্রীর মিলন অন্য কারো দেখতে নেই। তাই তোমাকে নিয়ে চলে এলাম।”
ক্রমশ…